চতুর্দশপদী পঙ্ক্তিমালা
(১)
ফসল যা সব মন্বন্তরে গিলে খেল
হাজার মানুষ মরণের কোলে গেল।
মড়ার উপর ঝাঁকে ঝাঁকে কাকে চিলে
পড়ল ঝাঁপিয়ে মহানন্দে নিল ছিলে।
চৈতী ধান গেল নীল আবাদের ফেড়ে
বেনিয়ারা সব ধানী জমি নিল কেড়ে।
নীল চাষে হলো গোলাঘর শস্য হারা
খাদ্যাভাবে বঙ্গে বহুলোক গেল মারা।
নড়ল টনক রাজ্যজুড়ে এ খবরে
সাম্রাজ্য থাকে কী গেলে কৃষক কবরে !
খাবার জন্মাতে কৃষিতে নজর চাই
একটি পত্রিকা জন্ম দিতে হলো তাই।
কৃষিকথা জন্ম থেকে যাচ্ছে দিয়ে দিশে
তার পঁচাত্তর জয়ন্তী ভরি আশীষে।।
(২)
ভাদুই ধান কি চৈতী ধানে ভরা মাঠ
পয়লা বৃষ্টির আগে বুনে কেউ পাট।
শাকসবজির শাখা দোলে ডাঙ্গাজুড়ে
বাথানে চড়ছে পশু রাখালিয়া সুরে।
নীরবে বেনিয়া ঢুকে কুক্ষণে এ দেশে
লুটে নেয় ধন জন শাসকের বেশে।
সোনা ফলা দেশ ছেয়ে গেল তমাশায়
মন্বন্তর গ্রাস করে তামাম বাংলায়।
আবার স্বদেশে এল প্রাণের উচ্ছ্বাস
নতুন ধারায় হয় কৃষির বিকাশ।
গোলা ভরা ধান আর জলাশয়ে মাছ
গোয়ালে গরুর পাল আর ফুল চাষ।
চাঁদ সওদাগরের সপ্তডিঙ্গা ভরে
ফসল- ভূষণ যায় দেশ দেশান্তরে।।
(৩)
ধান ছিল পাট ছিল ছিল মসলিন
ধন ছিল মান ছিল ছিল শুভদিন।
ক্রমে এলো বর্গি আর বেনিয়া এ দেশে
ধন জন নাশ করে তলানির শেষে।
মন্বন্তরে গ্রাম ডুবে পত্তন নগরে
নীল চাষে কড়ি জমে বণিকের ঘরে।
রেল এলো ব্রিজ হলো বাড়াল ব্যবসায়
জনতার ত্রাহি ত্রাহি নামাল তমাশা।
এর পর মৎস্য ন্যায় চলেছে স্বদেশে
বেঁচে থাকে চাষাভূষা নিদারুণ ক্লেশে।
ধর্মের বাঁধনে দেশ ভাগ হলে পরে
ভাষা আর আশা গেল আরেক খপ্পরে।
অতঃপর রক্ত ঝরে এলো স্বাধীনতা
গোলা ভরা ধান আজ সাথী কৃষিকথা।।
(৪)
রাখালের বাঁশি আর জ্যোৎস্না মাখা কিচ্ছা
ঝলমলে ওই দিনে ফিরে যেতে ইচ্ছা।
যেখানে নোলক পড়া গাঁয়ের মেয়েরা
পায়ে মল কটিবন্ধে করে চলা ফেরা।
ঢেঁকিতে পা আর কণ্ঠে সোনাভানি গান
আঁচলে মায়ের স্নেহ মুখ ভরা পান।
পালতোলা নাও ভাসে নদী ও বন্দরে
নাইয়োরি যায় কোন দূর তেপান্তরে।।
এখনো সরিষা ফোটে সোঁদা গন্ধমাখা
ফসলি জমিন হাসে যেন পটে আঁকা ।
গেলাঘর পূর্ণ ধানে কৃষকেরা সুখী
মঙ্গা আজ ইতিহাসে পড়ে খোকা-খুকি।
সুজলা সুফলা দেশ এত মনোহর
স্বপ্ন আর বাস্তবের যেন সহোদর।।
লেখক:
কৃষিবিদ এ এইচ ইকবাল আহমেদ*
* পরিচালক (অব.), বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সী, সেল:01558301908/ahiqbal.ahmed@yahoo.com